প্রতীক, সংকেত ও যোজনী

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - রাসায়নিক বিক্রিয়া | | NCTB BOOK
14

সপ্তম শ্রেণিতে তোমরা প্রতীক ও সংকেত সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছ। রসায়নবিদগণ গঠন অনুসারে পৃথিবীর সকল পদার্থকে মৌলিক ও যৌগিক এই দুই শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। এ পর্যন্ত মোট ১১৮ টি মৌলিক পদার্থের কথা জানা গেছে। সাধারণত মৌলের পুরো নাম না লিখে ইংরেজি বা ল্যাটিন নামের একটি বা দুইটি অক্ষর দিয়ে সংক্ষেপে মৌলটিকে প্রকাশ করা হয়। মৌলের পুরো নামের এ সংক্ষিপ্তরূপকে প্রতীক বলা হয়। যেমন— H (হাইড্রোজেন), O (অক্সিজেন), Ca (ক্যালসিয়াম) ইত্যাদি।

আবার কোনো মৌল বা যৌগের অণুর সংক্ষিপ্তরূপকে সংকেত বলা হয়। যেমন- হাইড্রোজেন অণুর সংকেত H2, অক্সিজেন অণুর সংকেত O2, হাইড্রোজেন ক্লোরাইড অণুর সংকেত HCl ইত্যাদি।

যৌগের সংকেত লেখার সময় আমাদেরকে মৌলের যোজনী সংখ্যা সম্পর্কে ভাবতে হবে। মৌলের যোজনীর সংখ্যা অনুযায়ী মৌলগুলো একে অন্যের সাথে রাসায়নিকভাবে যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে। মৌলিক পদার্থের যোজনীকে আমরা এক একটি হাতের সাথে তুলনা করতে পারি। যে মৌলের একটি হাত তার যোজনী হবে ১। হাইড্রোজেন এবং ক্লোরিন উভয়ই একহাত বিশিষ্ট মৌল। অর্থাৎ উভয়ের যোজনী ১। তাই হাইড্রোজেন ক্লোরাইডের সংকেত হবে HC1। অক্সিজেনের যোজনী ২ অর্থাৎ অক্সিজেনের ১টি পরমাণুর ২টি হাত আছে। এ ২টি হাত দিয়ে অক্সিজেন একযোজী বা ১ হাত বিশিষ্ট ২টি হাইড্রোজেনের পরমাণুকে ধরতে পারে। এ কারণে পানির সংকেত H2O ।

নাইট্রোজেন ও কার্বনের যোজনী যথাক্রমে ৩ এবং ৪। ফলে অ্যামোনিয়ার সংকেত NH3 এবং মিথেনের সংকেত CH। হাইড্রোজেন ক্লোরাইড, পানি, অ্যামোনিয়া ও মিথেনের অণুকে নিম্নরূপভাবে দেখানো যেতে পারে—

উল্লেখ্য কোনো কোনো মৌলের একাধিক যোজনীও থাকতে পারে। যেমন- সালফার এর যোজনী ২ ও ৪, আয়রন এর যোজনী ২ ও ৩ ইত্যাদি।

অতএব কোনো মৌলের যোজনী হলো ঐ মৌলের একটি পরমাণু কয়টি হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে যুক্ত হয় তার সংখ্যা। কোনো যৌগ গঠনের সময় সাধারণভাবে লক্ষ রাখতে হবে যেন মৌলের সবগুলো হাত বা যোজনী কাজে লাগে।

 

                                                                                        কয়েকটি মৌল ও যৌগমূলকের যোজনী

 যোজনী - ১যোজনী – ২যোজনী – ৩যোজনী – ৪
অধাতু (মৌল)

হাইড্রোজেন (H)

ফ্লোরিন (F) 

ক্লোরিন (CI) 

ব্রোমিন (Br)

আয়োডিন (1)

অক্সিজেন (O)

সালফার (S) 

কার্বন (C)

 

 

নাইট্রোজেন (N)

ফসফরাস (P)

 

 

 

কার্বন (C)

সালফার (S)

 

 

 

ধাতু (মৌল)

সোডিয়াম (Na)

পটাশিয়াম (K)

কপার (Cu) (আস)

সিলভার (Ag)

গোল্ড (Au) (আস)

 

 

ম্যাগনেসিয়াম (Mg)

ক্যালসিয়াম (Ca)

আয়রন (Fe) (আস)

কপার (Cu) (ইক)

জিঙ্ক (Zn)

টিন (Sn) (আস)

লেড (Pb) (আস)

অ্যালুমিনিয়াম (Al) 

আয়রন (Fe) (ইক)

গোল্ড (Au) (ইক)

 

 

 

 

টিন (Sn) (ইক) 

লেড (Pb) (ইক)

 

 

 

 

 

যৌগমূলক

অ্যামোনিয়াম (NH4+)

হাইড্রোক্সিল (OH-)

নাইট্রাইট (NO2-)

নাইট্রেট (NO3-)

হাইড্রোজেন কার্বনেট (HCO3-)

কার্বনেট (CO32-)

সালফাইট (SO32-)

সালফেট (SO42-)

 

 

ফসফেট (PO43-)

 

 

 

 

 

 

ছকে উল্লেখিত SO42-CO32-NO3-NH4+ ইত্যাদি পরমাণুগুচ্ছ স্বাধীনভাবে থাকে না। মৌলিক পদার্থের পরমাণুর মতো যৌগ গঠনে অংশ নেয়। এ জাতীয় পরমাণুগুচ্ছকে যৌগমূলক বা র‍্যাডিকেল বলে । যৌগের আণবিক সংকেত লেখার ক্ষেত্রে যে সকল নিয়ম অনুসরণ করা হয় তা নিম্নরূপ :

(১) যৌগে উভয় মৌল বা যৌগমূলকের যোজনী একই হলে এক্ষেত্রে সংকেতে যোজনী লেখার প্রয়োজন হয় না। শুধু মৌল কিংবা মূলকগুলো পাশাপাশি লিখলেই চলে। যেমন : CaO (ক্যালসিয়াম অক্সাইড), NH4Cl (অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড), NH4 NO3, (অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট) ইত্যাদি।

(২) উভয় মৌলের কিংবা উভয় মূলকের যোজনী কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যার গুণিতক হলে ঐ সংখ্যা দিয়ে যোজনীকে ভাগ করে বিনিময় করে লিখতে হয়। যেমন- কার্বন ডাইঅক্সাইড এর ক্ষেত্রে C2O4CO2 এখানে কার্বন ও অক্সিজেনের যোজনী যথাক্রমে 4 এবং 2 ।

(৩) উভয় মৌলের কিংবা উভয় মূলকের যোজনী ভিন্ন এবং গুণিতক না হলে, অর্থাৎ A মৌলের যোজনী x এবং B মৌলের যোজনী y হলে A ও B মৌল দ্বারা গঠিত যৌগের সংকেতটি হবে AyBx। A মৌলের যোজনী সংখ্যা B মৌলের ডানপাশে সামান্য নিচে ছোট করে এবং B মৌলের যোজনী সংখ্যা A মৌলের ডানপাশে নিচের দিকে ছোট করে লিখতে হয়। যেমন- অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড (Al2O3)

Content added By
Promotion